ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের উদ্দেশ্য নয় বছরেও পূরণ হয়নি 

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪১, ২৫ আগস্ট ২০১৯  

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক (ফাইল ফটো)

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক (ফাইল ফটো)

বাংলাদেশে অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে রেমিটেন্স। কেননা প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের জিডিপিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এজন্য সরকার প্রবাসীদের কল্যাণার্থে ২০১০ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। 

প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ব্যাংকটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বড় কোনো ব্যাংকে ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ খুলতে পারেনি। ফলে প্রবাসীরা এই ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছে না। অথচ ব্যাংকটির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।   

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স আহরণে নবম স্থান দখল করে আছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আহরণ করে। রেমিটেন্স  আহরণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, দ্বিতীয় চীন ও তৃতীয় অবস্থানে মেক্সিকো। 

মূলত হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সে পাঠাতে নানা উদ্যোগের  কারণেই রেমিটেন্স প্রবাহের এই ধারাবাহিকতা বজায় আছে। আর এই রেমিটেন্স প্রবাহের সিংহভাগ আসছে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। 

তবে সরকারের অনুমোদিত এই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে  প্রবাসীরা কেনো রেমিটেন্স পাঠাতে পারে না, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্তাব জাবিন বলেন, মানি লন্ডারিং আইন হওয়ার ফলে ২০১৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ (বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট) করতে গেলে অনেক কমপ্লায়েন্সের ব্যাপার রয়েছে। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকটি অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে না, এজন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো এই ব্যাংকের সঙ্গে ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ খুলতে আগ্রহী হয় না। তারা ব্যবসায়িক বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

কোনো ব্যাংকের সঙ্গে ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ খুললে ওই ব্যাংককে একটা মোটা অংকের অর্থ দিতে হয় বলেও জানান তিনি। বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক না হওয়ায় এ ব্যয়ভার বহন করা এ মুহূর্তে কঠিন। সব মিলিয়ে এখনও ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ করাটা হয়ে ওঠেনি।

আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকের সঙ্গে ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ খোলার জন্য প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেছি, তবে সেটা করা সম্ভাব হয়নি। আশা করছি, আমাদের ব্যাংকের কলেবর আরো বড় হবে। তখন আমরা রেমিটেন্স আনাসহ অন্যান্য কাজ করতে পারব- এমনটি জানান তিনি। 

তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি বাস্তবায়নে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু এটা প্রবাসীদের জন্য ডেডিকেটেড ব্যাংক, সেহেতু এ ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি রেমিটেন্স আনার প্রক্রিয়া থাকা উচিত’। 

জানা গেছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যয় সাশ্রয়ী পন্থায় নিরাপদে ও দ্রুততার সঙ্গে বিদেশ থেকে  রেমিটেন্স প্রেরণে সহায়তা প্রদান এবং বিদেশগামী ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে স্বল্প সময়ে ‘অভিবাসন ঋণ’ ও ‘পুনর্বাসন ঋণ’ প্রদান করার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। 

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত তারা ৩৫ হাজার ৪০০ বিদেশগামী কর্মীকে অভিবাসন ঋণ দিয়েছে। তারা মাত্র তিনদিনে অভিবাসন ঋণ মঞ্জুর করে। পাশাপাশি দেশ ফেরত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মীকে পুনর্বাসন ঋণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানেও সহায়তা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি।   

দেশের অভ্যন্তরে ৬৩টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব জেলায় ব্যাংকের শাখা খোলার পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে তারা 

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৫৯২ জনকে ৭১ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা  ঋণ দিয়েছে এবং ৮২ শতাংশ ঋণ আদায় করেছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৬৮ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১০৬ টাকা।   

প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি দেশ থেকে প্রবাসীরা ৯৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। এটি অতীতের সব রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। একই সঙ্গে আরবের এ দেশগুলো থেকে মোট পাঠানো রেমিটেন্সের ৫৯ শতাংশই এসেছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে ৫৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সে সব দেশে থাকা প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৯৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বা ১১১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিটেন্স এসেছিল ৮৫৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। 

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশের মধ্যে ৬টি হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ।

সেখানে বলা হয়, আগের বছরের ধারাবাহিকতায় গেল অর্থবছরেও সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে। দেশটিতে থাকা প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৩১১ কোটি ডলার। যা মোট আহরিত রেমিটেন্সের প্রায় ১৯ শতাংশ।  

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রেমিটেন্স পাঠানোর শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে অন্য দেশগুলো হচ্ছে- আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ওমান, ইতালি ও বাহরাইন।  

এ দিকে গেল অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) রেমিটেন্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে। দেশটি থেকে ২৫৪ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। আর তৃতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১৮৪ কোটি ২৮ লাখ ডলার। এছাড়া চতুর্থ স্থানে থাকা কুয়েত থেকে ১৪৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ১৭৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ১১৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, ওমান থেকে ১০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, কাতার থেকে ১০২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, ইতালি থেকে ৭৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার এবং বাহরাইন থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৪৭ কোটি ডলার।

জানা গেছে, গেল অর্থবছর প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল। সে সময় পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার পাঠান এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার দেশে পাঠান। আগের অর্থবছরের চেয়ে তা ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি

অর্থ-কড়ি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত